গাজীপুরের সৌন্দর্য মকস বিল, মনপুরা দ্বীপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

Mokosh Bill, Monpura Dip, Gazipur

মকস বিল, গাজীপুর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বিল। এটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বেশ পরিচিত। বর্ষার মৌসুমে এই বিলে পানি জমে থাকে এবং স্থানীয় মানুষজন এটি নৌকা চালানো, মাছ ধরা এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবহার করে।


মকস  বিলের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: বর্ষার সময় এখানে বিশাল জলরাশির সৃষ্টি হয় এবং চারপাশের সবুজ প্রকৃতি স্থানটিকে আরও সুন্দর করে তোলে। 
  • প্রাণী ও উদ্ভিদজীবন: এই বিলে বিভিন্ন প্রকার মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ দেখা যায়। বিলের আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও দেখতে পাওয়া যায়।
  • পর্যটন স্থান: বিশেষ করে বর্ষাকালে পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসেন। স্থানীয় মানুষজন নৌকা ভাড়া দিয়ে পর্যটকদের বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।


মনপুরা দ্বীপ:


বিস্তৃত জলরাশির উপর জল কুটির এবং বিলের মধ্যে কৃত্রিমভাবে তৈরি মনপুরা দ্বীপ। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে অপরূপ জলজ নিসর্গ মকস বিলের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এই দ্বীপটি। যার নাম রাখা হয়েছে মনপুরা দ্বীপ। 

  • দ্বীপের আকার: এটি প্রায় ১০০ মিঃ থেকে ১৫০ মিঃ এর মত হবে আনুমানিক। 
  • নামকরণ: এই দ্বীপটির নাম কেনো মনপুরা দ্বীপ রাখা হয়েছে এর রহস্য সত্যি বলতে অজানা। 

কিভাবে যাবেন:

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় যেতে ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করা যায়।


মকস বিল, গাজীপুরে পৌঁছাতে আপনি ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি উপায়ে যেতে পারেন। এখানে কিছু সাধারণ পথের নির্দেশিকা দেওয়া হলো:


১. বাসে (ঢাকা থেকে):

  • স্টার্টিং পয়েন্ট: ঢাকার গাবতলী, আবদুল্লাহপুর বা অন্য কোনো প্রধান বাসস্ট্যান্ড।
  • গন্তব্য: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা।
  • ঢাকার যেকোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে গাজীপুর বা চন্দ্রা গামী বাসে উঠতে হবে। 
  • চন্দ্রা মোড় বা কালিয়াকৈর পৌঁছানোর পর সেখান থেকে রিকশা, অটো বা সিএনজিতে মোকস বিল যেতে পারবেন।


২. প্রাইভেট গাড়িতে:

  • রুট: ঢাকা → উত্তরা → টঙ্গী → চন্দ্রা মোড় → মোকস বিল।
  • ঢাকা থেকে উত্তরা হয়ে টঙ্গী দিয়ে যেতে হবে। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। চন্দ্রা মোড় থেকে কালিয়াকৈর হয়ে মোকস বিলের দিকে যেতে পারবেন। 
  • গুগল ম্যাপ ব্যবহার করলে এটি আরও সহজ হবে।


৩. ট্রেনে (ঢাকা থেকে):

  • স্টার্টিং পয়েন্ট: ঢাকা বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন।
  • গন্তব্য: কালিয়াকৈর রেলস্টেশন।
  • ঢাকা থেকে কালিয়াকৈর যাওয়ার জন্য কয়েকটি ট্রেন পাওয়া যায়। ট্রেনে কালিয়াকৈর পৌঁছানোর পর সেখান থেকে অটো বা রিকশায় মোকস বিল যেতে পারবেন।


৪. অটো বা সিএনজি:

  • গাজীপুর বা চন্দ্রা মোড় থেকে সিএনজি বা অটোতে সরাসরি মোকস বিলে যাওয়া যায়। কালিয়াকৈর উপজেলা বা চন্দ্রা মোড়ের যেকোনো জায়গা থেকে সিএনজি বা অটো পাবেন।


ভ্রমণের সময়:

ঢাকা থেকে মোকস বিলের দূরত্ব প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার। রাস্তার অবস্থা এবং যানজটের উপর নির্ভর করে সময় লাগতে পারে ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টা।


মনে রাখার বিষয়:

  • বর্ষার মৌসুমে মোকস বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য, তাই এই সময়টাতে ভ্রমণ পরিকল্পনা করা ভালো।


মোকস বিলে নৌকাভাড়ার পরিমাণ সাধারণত মৌসুম, নৌকার আকার এবং ভ্রমণের সময়ের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত নৌকাভাড়া নিম্নরূপ হয়ে থাকে:


  1. ছোট নৌকা: ছোট আকারের নৌকা, যেখানে ২-৪ জন যাত্রী বসতে পারে, এর জন্য সাধারণত ভাড়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি ঘন্টা।
  2. বড় নৌকা: বড় আকারের নৌকা, যেখানে ১০-১৫ জন পর্যন্ত যাত্রী যেতে পারে, এর জন্য ভাড়া হয় ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা প্রতি ঘন্টা বা কখনও কখনও পুরো দিনের জন্য।


টিপস:

  • ভাড়া আলোচনা করুন: ভ্রমণ শুরুর আগে নৌকাওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে সঠিকভাবে আলোচনা করে নেওয়া ভালো, কারণ ভাড়া কখনও কখনও সমঝোতার মাধ্যমে কমানো যেতে পারে।
  • বর্ষার মৌসুম: বর্ষার সময় পর্যটকদের সংখ্যা বেশি থাকে, তাই এ সময়ে ভাড়া কিছুটা বেশি হতে পারে। 
  • নিরাপত্তা: নৌকায় চড়ার সময় সুরক্ষা সামগ্রী (যেমন লাইফ জ্যাকেট) নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।


মোকস বিলে ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে উপযুক্ত মৌসুম। এই সময়ে বিলে পানি পূর্ণ থাকে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকে অনবদ্য। নৌকায় ভ্রমণ করা, সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করা, এবং বিলের জলে পাখিদের বিচরণ দেখা—সবই বর্ষাকালে সেরা উপায়ে উপভোগ করা যায়।


বর্ষাকালে ভ্রমণের সুবিধা:

  1. পানি পূর্ণ থাকে: বর্ষার সময় মোকস বিল জলমগ্ন থাকে, যা নৌকাভ্রমণের জন্য আদর্শ।
  2. প্রকৃতির সৌন্দর্য: চারপাশে সবুজ ধানের ক্ষেত ও জলাভূমির সৌন্দর্য বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
  3. পাখি দেখা: এই সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।


শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি):

শীতকালে মোকস বিলে পানি কমে যায়, ফলে নৌকাভ্রমণ সম্ভব হয় না। তবে এই সময়েও যদি কেউ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে চান, পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে বিলে ঘুরতে পারেন।


সার্বিকভাবে, বর্ষাকাল মোকস বিলে ভ্রমণের জন্য সেরা সময়।


No comments

Powered by Blogger.